করোনা বিধিনিষেধের বোঝা আর বহন না করে সংক্রমণকে সঙ্গে নিয়েই বসবাস করতে যাচ্ছে ব্রিটেন। আর সেই কারণেই ভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট রুখতে যুক্তরাজ্যে জারি হওয়া বিধিনিষেধ বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে যুক্তরাজ্যের মানুষকে বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরার প্রয়োজন পড়বে না। একইসঙ্গে বার-রেস্টুরেন্টে প্রবেশের জন্য দেশটিতে এতোদিন টিকা সনদ প্রদর্শনের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, সেটিও তুলে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
অবশ্য ব্রিটেনে গত দুই সপ্তাহ ধরেই করোনা সংক্রমণ হ্রাস পাচ্ছে। তবে সংক্রমণ কমলেও তা এখনও রয়েছে লাখের ওপরেই। যদিও গত বছরের শেষের দিকে বা চলতি মাসের শুরুতেও ব্রিটেনে সংক্রমণের যে উর্ধ্বমুখী হার দেখা যাচ্ছিল তা সম্পূর্ণ রূপে না কমলেও, একটি সমান্তরাল রেখায় পরিণত হয়েছে। আর তাই সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই বরিস জনসনের সরকার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরের শেষের দিকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ব্রিটেনে সংক্রমণ ও হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করে। সেই পরিস্থিতিতে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ব্রিটেনজুড়ে করোনা বিধিনিষেধ হিসেবে ‘প্লান বি’ জারি করেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
অবশ্য যুক্তরাজ্যের মানুষ সেই সিদ্ধান্ত খুব ভালোভাবে গ্রহণ না করায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে বিধিনিষেধের মাত্রা ‘প্লান বি’ থেকে ‘প্লান এ’-তে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনে ‘প্লান এ’ ন্যূনতম করোনাবিধি হিসেবে পরিচিত।
অবশ্য ‘প্লান বি’ বিধিনিষেধ জারি করে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সকল বদ্ধ জায়গাতেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কেউ যদি মাস্ক না পরেন, তবে জরিমানা বা কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে। অন্যদিকে, বার, নাইট ক্লাব, ফুটবল মাঠ বা বড় কোনো অনুষ্ঠানে প্রবেশের সময় টিকা সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক।
তবে সমংক্রমণ কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় সর্বশেষ নির্দেশনায় বরিস জনসনের সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বদ্ধ জায়গায় বাধ্যতামূলকভাবে কাউকে মাস্ক পরতে হবে না। তবে খোলা জায়াগায় মাস্ক পরার নির্দেশনা আগের মতোই বহাল থাকবে। এছাড়া যেসব কর্মী এতোদিন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-র মাধ্যমে কাজ করছিলেন তারা ইচ্ছা করলে ফের অফিসে ফিরতে পারেন। একইসঙ্গে বার, নাইট ক্লাব বা বড় কোনো অনুষ্ঠানে প্রবেশের জন্য করোনা টিকার নেওয়ার সনদও দেখাতে হবে না।
এদিকে ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোতেও শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে না বলে জানানো হয়েছে। তবে গণপরিবহন ব্যবহারের সময় যাত্রীদের সবাইকে আগের মতোই মাস্ক পরতে হবে। একইসঙ্গে বিধিনিষেধ জারি থাকা সত্ত্বেও কেউ মাস্ক না পরলে তাদের জরিমানা বা শাস্তির মুখে পড়তে হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৯ জুলাই যুক্তরাজ্যে করোনা বিধিনিষেধ প্রত্য়াহার করা হয়েছিল। ওই দিনটিকে ‘ফ্রিডম ডে’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু নভেম্বরের শেষের দিকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর ফের বিধিনিষেধ জারি করা হয়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক দিনে যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন এবং মারা গেছেন ৩৪৬ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন। করোনায় বিপর্যস্ত ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান বেশ ওপরের দিকেই।