রাজধানীর হাজারীবাগ ও ধানমন্ডি এলাকায় ভ্যানে করে কাপড় আর ফুল বিক্রির আড়ালে ইয়াবা পাচার করতো মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির। বৃহস্পতিবার রাতে পিচ্চি মনির ও তার সহযোগী জুবায়ের হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২ এর সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড তাজা গুলি, ১৮ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৬ গ্রাম আইস এবং মাদক বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকাজব্দ করা হয়েছে।
কক্সবাজার ও টেকনাফের মাদক চোরাচালানকারী চক্রের সঙ্গেপিচ্চি মনিরের যোগাযোগ রয়েছে। সম্প্রতি শরীয়তপুরে বাবা চাতক শাহ স্মরণে একটি মাজার নির্মাণ করে নিজেকে অন্য পরিচয়ে উপস্থাপনের চেষ্টাও করে মনির। মনির মাদক ও অস্ত্র কারবারের অন্যতম হোতা ও হত্যা মামলার আসামি। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, পিচ্চি মনিরের পরিবার জীবিকার সন্ধানে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় চলে আসে এবং লালবাগের শহীদনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে। বাবার ফলের ব্যবসায় সহায়তা করত মনির। একসময় সে এলাকার বখে যাওয়া ছেলেদের সঙ্গে যোগ দিয়ে চুরি, ছিনতাই শুরু করে।ধীরে ধীরে সে এলাকার বখাটেদের নিয়ে লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলে। এই চক্রটি ব্যবহার করে সে মাদক ব্যবসা শুরু করে।
২০১২ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় সে ও তার জনৈক বন্ধু মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়। প্রথমে স্থানীয় মাদক ডিলারদের কাছ থেকে অল্প করে মাদকদ্রব্য কিনে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করত। ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার মাদক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়।এরপর টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে তার কাছে নিয়মিত ইয়াবা আসত। মাঝেমধ্যে সে ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসত।
মূলত তারা মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করত।
শতকরা ২০ শতাংশ হারে অ্যাডভান্স পেমেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় আনা হত।মাদকের ডেলিভারি ও লেনদেন মনিরের ভাড়া বাসায় বা সুবিধাজনক স্থানে সম্পন্ন হত। মনির ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটে হিসেবে ছদ্মবেশে মাদকের কারবার করত। মনির প্রতিমাসে কয়েকটি চালান টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনত। মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাদক সরবরাহ করত।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। কৌশলগত কারণে খুচরা বিক্রেতাদের কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না। কেউ কাউকে চিনত না। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর তাকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। সে এক একটি এলাকায় এক-দুই বছরের বেশি অবস্থান করত না। সে শরীয়তপুরে নিজের বাড়িতে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সে তার বাবার নামে এলাকায় একটি মাজার নির্মাণ করছে।
মনির ২০১৮ সাল থেকে অস্ত্র ব্যবসা শুরু করে। এরপর সে অবৈধ পিস্তলসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় এবং ৭ মাস কারাগারে থাকে। ২০২০ সালে সে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। এ সময় সে এক বছর কারাগারে ছিল। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত তিনটি মামলা রয়েছে।