রাজধানীর রামপুরার রিয়াজবাগের একটি বাসায় ভেজাল মদের কারখানা গড়ে তোলে একটি চক্র। বিভিন্ন ভাঙ্গারী দোকান থেকে মদের বোতল সংগ্রহ করে ওই কারকানায় নিয়ে নতুন লেভেল লাগানো হতো। আর বাজার থেকে সংগ্রহ করা ইথানল, এসেন্স, চারকল পাউডার দিয়ে তৈরি করা হতো দেশী বিদেশি বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের মদ। পরে সেগুলো খুচরা ও পাইকারি হিসেবে বিক্রি করা হতো। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে গত ৬ মাস ধরে ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রি করে আসছিলো চক্রটি।
এ চক্রের মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় ডিএনসি। এরআগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মূলহোতা কারখানার মালিক কাজী আশরাফুজ্জামান ওরফে মোশারফ, তার দুই সহযোগী মো. আবুল খায়ের চৌধুরী ও মো. হায়দার ভূঁইয়া।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০ বোতল বিদেশি ব্লাক লেবেল, ৫ বোতল নেমিরোফ, ৮ বোতল কেরুস ফাইন ব্রান্ডি, মদ তৈরির উপকরণ ইথানল ২০ লিটার, এসেন্স ৪০০ গ্রাম, চারকল পাউডার ৪৫০ গ্রাম, বোতলিং করার পাইপ ১টি, বিদেশি মদের লেবেল ৮০টি, মদের কর্ক ৮০টি, খালি বোতল ৩০টি ও একটি স্টিলের চোঙ্গা জব্দ করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির উপপরিচালক (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ইতিপূর্বে ভেজাল মদ পান করে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ফলে ডিএনসি ডিজি ভেজাল মদ প্রতিরোধের নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রামপুরায় ভেজাল মদের কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। পরে অভিযান চালিয়ে চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভেজাল মদ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ভাঙারী দোকান থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের বোতল সংগ্রহ করে নতুন লেভেল লাগাতো। পাশাপাশি বাজার থেকে ইথানল, এসেন্স ও চারকল পাউডারসহ বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে নানারকম ব্রান্ডের মদ তৈরি করতো। পরে সেগুলো খুচরা ও পাইকারিভাবে বিক্রি করতো। চক্রটি গত ৬ মাস ধরে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। তাদের কেমিক্যাল ও লেভেল সরবারহসহ অন্যান্য কাজে অন্য কাদের সংশ্লিষ্টরা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ভেজাল মদ এড়িয়ে চলতে অবৈধ উৎস থেকে না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন ডিএনসির এ কর্মকর্তা।
কোনো ওয়ার হাউজ তাদের কাছ থেকে মদ কিনত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, এরা কোনো ওয়ার হাউজের কাছে মদ বিক্রি করত না। তারা খুচরাভাবে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে মদ বিক্রি করত। এছাড়া নতুন বিধিমালা অনুযায়ী বারগুলো বিদেশি মদ আমদানি করতে পারবে।
এর মধ্যে ৬০ শতাংশ দেশি ও ৪০ শতাংশ বিদেশি মদ রাখতে পারবে বারগুলো।
ভেজাল মদ মানুষজন কেন কিনছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মদের দাম একেক সময় একেক রকম। ভেজাল মদের তো দামের কোনো সীমা নাই। ভেজাল মদের তৈরি খরচই তো অনেক কম। এছাড়া তারা ভেজাল মদের এমনভাবে বোতলজাত করে যে মানুষ একটা বুঝতে পারে না আসল নাকি নকল। যারা তাদের কাছ থেকে কিনেছে তারা আসল মদ মনে করেই নিয়ে গেছে।