Saturday, September 30, 2023
Homeবাংলাদেশ‘নেতাদের সামনেই আমাকে ঘেরাও ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে’

‘নেতাদের সামনেই আমাকে ঘেরাও ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত উপ-কমিটির প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ. ওয়াই মশিউজ্জামান বলেছেন, আওয়ামী লীগের সুপ্রিম কোর্টের নেতাদের সামনেই তাদের কর্মীরা আমাকে ঘেরাও করে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। কিন্তু নেতারা তাদের থামানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেননি।
তিনি বলেন, নেতারা প্রতিবাদ করেননি। এটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। আমার জীবনে এ রকম নোংরামি কখনো দেখিনি। এ কারণে পদত্যাগ করেছি। শনিবার রাতে সংবাদকর্মীদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে এ. ওয়াই মশিউজ্জামান বলেন, আমি সম্পাদক পদে ভোট পুনর্গণনার কথা কখনো বলিনি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটায় বলেছিলাম, তারা যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন করেছেন, শুক্রবার বিকেল তিনটায় উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সেই আবেদন নিষ্পত্তি করব। তখন এ কথা না বললে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারতাম না। আমাকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। বলতে পারেন জান বাঁচানোর জন্য ওই কথা বলে চলে এসেছি। যদিও ভোট গণনার আবেদন নিয়ে তখন আমার কিছু বলার এখতিয়ার ছিল না। কারণ তার আগে রাত একটায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম।

আবারও ভোট পুনর্গণনার দাবি আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের : শনিবার সন্ধ্যায় আবারও সুপিম কোর্ট বারে সম্পাদক পদে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইজীবী পরিষদ। সংগঠনটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পাদক প্রার্থী মো. আব্দুন নূর দুলালের ভোট নতুন করে গণনার দরখাস্তের পর নির্বাচন সাব কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মশিউজ্জামান কর্তৃক ১৮ মার্চ ঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই দিন বিকেল ৩টায় সম্পাদক পদের উভয় প্রার্থী উপস্থিত থাকার পরও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কসহ অধিকাংশ সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে ভোট পুনর্গণনা করা সম্ভব হয়নি।

নির্বাচন সাব কমিটির কাছে আমাদের অনুরোধ, ঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোট পুনর্গণনার মাধ্যমে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান করুন। অন্যথায় আমরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কার্যকরী কমিটিকে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

কী হয়েছিল সেদিন রাতে : বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়। গণনা শেষে দেখা যায়, সভাপতিসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল এবং সম্পাদকসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল বিজয়ের পথে।

সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। তারা সম্পাদক পদে ভোট কারচুপি এবংবাতিল হওয়া ভোট কাজলের পক্ষে গণনা করার অভিযোগ আনেন।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ. ওয়াই মশিউজ্জামান অভিযোগ নাকচ করে ফল ঘোষণা করতে অনড় থাকলে মিছিল, স্লোগান ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ব্যাপক হইচই শুরু করেন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল লিখিতভাবে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ না করলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান এ ওয়াই মশিউজ্জামানের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির প্রধান এ. ওয়াই মশিউজ্জামান সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন নেন এবং ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করেন। ওই সময় তিনি জানান, শুক্রবার বিকেল তিনটায় দুই সম্পাদক প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু গতকাল (শুক্রবার) অ্যাডভোকেট এ. ওয়াই মশিউজ্জামান সুপ্রিম কোর্ট বারে আসেননি। এ কারণে ভোট পুনর্গণনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে পাঁচ হাজার ৯৮২ জন আইনজীবী ভোট দেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত প্রায় একটা পর্যন্ত চলে ভোট গণনা।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নির্বাচনি সাব কমিটির একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতিসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগের সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এগিয়ে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য পাঁচজন হলেন, সহ-সভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন, সদস্য পদে ফাতেমা বেগম, সাহাদত হোসাইন রাজিব ও সুব্রত কুমার কুন্ডু।

বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য সাতজন হলেন, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মাহবুবুর রহমান খান, ট্রেজারার মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সদস্য ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, গোলাম আক্তার জাকির, মো. মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলাম।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments