Wednesday, March 22, 2023
Homeবাংলাদেশডা. বুলবুল হত্যায় জড়িত ৪ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

ডা. বুলবুল হত্যায় জড়িত ৪ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ছুরিকাঘাতে ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনই ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ডিবির ভাষ্য, আনন্দবাজার থেকে শেওড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার পথে ডা. মাহী বুলবুলের রিকশার গতিরোধ করে ছিনতাইকারীরা। তারা মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করে তারা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে শুধু ফোনটি ছিনিয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।

মঙ্গলবার রাতে মিরপুর, পল্লবী, সাভারের কাউন্দিয়ায় অভিযান চালিয়ে করে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. রায়হান ওরফে সোহেল আপন (২৭), রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), আরিয়ান খান হৃদয় (২৩) ও সোলায়মান (২৩)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়।

বুধবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিহত আহমেদ বুলবুল (৩৯) পেশায় একজন দন্ত চিকিৎসক এবং প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। তিনি ১৫ থেকে ২০ দিন আগে নোয়াখালীতে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ পান।

বুলবুল গত ২৭ মার্চ ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার আনন্দবাজার এলাকা থেকে শেওড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে যেতে রিকশায় করে রওয়ানা হন। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পশ্চিম কাজীপাড়ার বেগম রোকেয়া সরণিতে নাভানা ফার্নিচার শোরুম ও আমসিকো ফার্নিচার শোরুমের সামনে পৌঁছালে চার ছিনতাইকারী তার রিকশার গতিরোধ করে। তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে স্যামসাং মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

ভুক্তভোগী বুলবুল বাধা দিলে ধারালো ছোরা দিয়ে তার ডান হাঁটুর উপরে আঘাতে গুরুতর জখম করে তারা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও চিৎকারের কারণে শুধু মোবাইল ফোন ছিনিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে বিহঙ্গ বাসের চালক ও হেলপারের সহযোগিতায় ভুক্তভোগী বুলবুলকে প্রথমে স্থানীয় আল-হেলাল হাসপাতাল ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গ্রেপ্তার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান হাফিজ আক্তার। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, ২৭ মার্চ ভোর চারটার দিকে গ্রেপ্তার চার জনসহ মোট পাঁচজন মিরপুর পশ্চিম কাজীপাড়া এলাকায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। তারা প্রত্যেকেই পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রথমে রায়হানকে ডিবি মিরপুরের জোনাল টিম ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় গ্রেপ্তার করে।

চিকিৎসক বুলবুলের সঙ্গে নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল রংমিস্ত্রি সোহরাবের। সোহরাবকে ঘটনার দিন ভোরে বুলবুল ফোন করে ফার্মগেট যেতে বলেন। সেখান থেকে দুজন এক সঙ্গে নোয়াখালী যেতে চেয়েছিলেন। তার পরিবারের দাবি, চিকিৎসক বুলবুল বাসা থেকে বের হন ভোরে। মেট্রোরেলের ৩০৫ নম্বর পিলার থেকে ফার্মগেটের দিকে যাওয়ার কথা ছিল তার। অথচ বুলবুল আহত অবস্থায় উল্টো দিকে পশ্চিম কাজীপাড়া ২৭৮ নম্বর পিলারের কাছে পড়ে ছিলেন।

সেখানে বুলবুল কীভাবে গেলেন? কোনো সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা হয়েছে কি না জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। আর দন্ত চিকিৎসক বুলবুল হত্যার ঘটনাটি ‘আননোওন মার্ডার কেস’ হিসেবে তদন্ত শুরু হয়েছে। এটি হত্যার পাশাপাশি ডাকাতি মামলা হিসেবে টার্ন করবে।

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে নির্দেশদাতা বা কারো ইন্ধন ছিল কি না, কেনই বা হত্যাকাণ্ডকে ছিনতাই বলছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে গোয়েন্দা পুলিশের কাজ ক্লু উদ্ধার করা ও কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা। যেকোনো ঘটনা ঘটলে আমরা এ কাজগুলো করি। আর এই ঘটনার প্রমাণ হলো, চারজনকে গ্রেপ্তার ও নিহত চিকিৎসকের মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং তাদের দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার। মামলা তদন্তের সময়ে সব দিক বিবেচনা করা হবে। প্রাথমিকভাবে এটিকে ছিনতাই মনে হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments