বাংলাপেইজ ডেস্ক:: সিলেটে উদ্বেগজনকহারে নৃশংস হত্যার ঘটনা বেড়েই চলছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি গড়াচ্ছে খুন পর্যন্ত। একের পর এক খুনের ঘটনায় জনমনে আতঙ্কও বাড়ছে। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল সিলেট নগরীর সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুরিকাঘাতে নাজিম আহমদ (১৮) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। সিনিয়র-জুনিয়র দন্ধের জেড়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, করোনাকালে সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন জটিলতা ও টানাপড়েনের কারণে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটনা ঘটছে। আর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এই পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করছেন। সিলেটে গত ২৫ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত খুন হয়েছেন ৪ জন। তারমধ্যে ২জন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নিহত হয়েছেন। আরও দুজন কথা কাটাকাটির জের ধরে নিহত হয়েছেন
সর্বশেষ গত শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুরিকাঘাতে নাজিম আহমদ নামের এক তরুণ নিহত হন। পেশায় হোটেল শ্রমিক নাজিম নগরের দরগাহ মহল্লার বাসিন্দা নুর মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবার আলী শেখ বলেন, ‘জুনিয়র-সিনিয়র নিয়ে কথাকাটির জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে আরও তিন-চার জন জড়িত থাকতে পারে। তাদেরও প্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।’
এর আগে একই দিন ভোর ছয়টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার সাহেবের বাজারে জমি সংক্রান্ত বিরোধে দু’পক্ষের সংঘর্ষে পল্লী চিকিসৎক মো. নিজাম উদ্দিন নিহত হন। ঘটনার পর পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে জড়িত ৪ জনকে আটক করেছে।
গত ৩ এপ্রিল সিলেটের জৈন্তপুরের হরিপুর বাজারে জমি সংক্রান্ত বিরোধে দু’পক্ষের প্রায় ১০ ঘন্টাব্যাপী ম্যারাথন সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে হাফেজ সালেহ আহমদ নামের একজন নিহত হন। তিনি সংঘর্ষ থামাতে মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকায় ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরদিন নিহতের ভাই নুর উদ্দিন বাদি হয়ে থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক আহমদসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১২-১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন রাইহান বলেন, ‘মূলত সামাজিক অবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি ও মহামারী মানুষের আচরণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। আর মানুষের মনের ওপর যখন বিরূপ প্রভাব পড়ে ঠিক তখনই মানুষ খুনের মতো ঘটনা ও উগ্র আচরণ করে। এজন্য প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বিচার দ্রুত সম্পাদন করা। এই পদক্ষেপ সরকারের নেওয়া উচিত।’
সিলেটে অনেক তুচ্ছ কারণে হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় জানিয়ে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি’র কার্যালয়ের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা বলছে এ অঞ্চলে তুচ্ছ কারণে হত্যাকাণ্ড হয়। সম্পত্তি নিয়ে পারস্পরিক বিরোধ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, পারিবারিক কলহও খুনের ঘটনা ঘটে। আমাদের মধ্যে এখন আর আগের মত পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন নেই। আপনজনের প্রতি আস্তা, মূল্যবোধ নেই। কেউ কাউকে সাহায্য করতে চান না।’ তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আইনি ভাবে শাস্তি দিয়ে এই অপরাধমূলক কাজ থেকে মানুষকে ফেরানো যাবে না। নৃশংস কাজ থেকে মানুষের ধ্যান ধারনা সরিয়ে নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’