কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিশিষ্টজন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় সাবেক এ অর্থমন্ত্রীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি (আবুল মাল আবদুল মুহিত) অত্যন্ত সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি বলছিলেন যে, আমার প্রাপ্তি হয়েছে, আমার কাজ শেষ, তোমরা দেখো বাকিটুকু। কয়েকদিন ধরেই তিনি বলছিলেন সিলেট চলে যাবেন। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্ধের দিনেও তাকে অফিসে দেখা যেতো। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল ছিলেন। এদেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ বেশি নেই, মুহিত সাহেব শতভাগ সৎ লোক ছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। তার মধ্যে ১০টি শেখ হাসিনার সরকারের সময়।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষে সার্জেন্ট এট আর্মস কমোডর এম এম নাঈম রহমান। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদে সম্পন্ন হয়। তবে সংসদ প্লাজায় তার দ্বিতীয় জানাজা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে। জানাজা নামাজ শেষ মসজিদের দক্ষিণ ফটকে আবুল মাল আবদুল মুহিতের মরদেহ দেখতে তার বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় করেন।
বার্ধক্যজনিত কারণে বহুমাত্রিক এই মানুষটি কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মুহিত ১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত। তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মুহিতের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাজেট ঘোষণা করা এই সাবেক অর্থমন্ত্রী দেশ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। বাংলাদেশের উন্মেষ ও রূপান্তরের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুহিত সরকারি কর্মকর্তার সর্বোচ্চ পদ সচিব, মন্ত্রী, অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, লেখক, গবেষক, পরিবেশবিদ নানা পরিচয়ে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে রেখেছেন গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।