Monday, December 2, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeবাংলাদেশঢাকাঅভিযোগ উঠলে বন্ধ করে ‘অন্য নামে হাসপাতাল খোলেন’ তিনি

অভিযোগ উঠলে বন্ধ করে ‘অন্য নামে হাসপাতাল খোলেন’ তিনি

দালালের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নেওয়া হয়েছিল রোগী যমজ দুই শিশুকে। তিন দিন আইসিইউতে রেখে তাদের জন্য ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সোয়া লাখ টাকার বিল। সেই টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় চিকিৎসা। শিশু দুটির অভিভাবক মাকে হেনস্তার পর একপর্যায়ে অসুস্থ শিশুদের বের করে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। অ্যাম্বুলেন্সে মা যখন দুই শিশুকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান, তখন তাঁর এক কোলের সন্তানটি মৃত, অন্যটি সংকটাপন্ন।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন

রাজধানীর শ্যামলীর ‘আমার বাংলাদেশ’ নামের হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় শিশু দুটিকে বের করে দেওয়া হয়। অসুস্থ অপর শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন শিশু দুটির মা আয়েশা আক্তার। এরপর বিকেলে মোহাম্মদপুর থেকে হাসপাতালটির পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মামলার আসামি আরেক পরিচালক সোয়েব খান এখনো পলাতক।

এ ঘটনা নিয়ে সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গোলাম সরোয়ার ১৯৯২ সালে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেন। ২০০০ সালের দিকে তিনি ঢাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২১ বছরে তিনি ভিন্ন ভিন্ন নামে ছয়টি (রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায়) হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে ব্যবসা করেছেন। একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তিনি সেটি বন্ধ করে নতুন নামে হাসপাতাল খোলেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগী এনে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ ‘আমার বাংলাদেশ’ হাসপাতালটি চালু করেন গত বছরের জানুয়ারিতে।বিজ্ঞাপন

যমজ শিশুদের ঘটনা তুলে ধরে খন্দকার আল মঈন বলেন, শিশু দুটি ৩১ ডিসেম্বর থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। এক দালালের মাধ্যমে ২ জানুয়ারি তাদের ‘আমার বাংলাদেশ’ হাসপাতালে আনা হয়। ভর্তির পরই দুই শিশুর মা আয়েশা আক্তারকে বলা হয়, তাঁর সন্তানদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করতে হবে।

এর তিন দিন পর ওই মাকে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন শিশু দুটির মা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৪০ হাজার টাকা দিতে সমর্থ হন। এ টাকা দেওয়ার পর তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেন, আস্তে আস্তে পুরো টাকা পরিশোধ করবেন। সন্তানদের চিকিৎসা দিতে অনুরোধ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার শিশু দুটির অবস্থা আরও খারাপ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, টাকা ছাড়া চিকিৎসা দেওয়া হবে না। এমনকি ওই নারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয় এবং শিশুদের চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিকেলে তাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

আয়েশা আক্তার তখন বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। ঘটনাটি জানাজানির পর এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে র‌্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, যমজ শিশুর বাবা মো. জামাল সৌদি আরবপ্রবাসী। এ কারণে হাসপাতালের মালিক গোলাম সরোয়ার ভেবেছিলেন বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করবেন। যখন তিনি বুঝতে পারেন ওই নারীর কাছে খুব বেশি টাকা নেই, তখন তাঁদের বের করে দেন। এ হাসপাতালে রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে, তার হিসাব দেওয়া হয় না। ইচ্ছেমতো বিল আদায় করা হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments