দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েছি বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য অপসারণ করা উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। একটি বিভাগীয় মামলার হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
শরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। যে বিষয়ে একটি মিশন-ভিশন রয়েছে। সে মিশন-ভিশন বাস্তবায়ন করতে গিয়েই প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েছি। দুদকের সহকর্মী, মিডিয়া সহকর্মী ও মানুষের দোয়ার কারণে আমি গুম হতে রেহাই পেয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর। তিনি ন্যায়বিচারের প্রতীক। প্রধানমন্ত্রীর কারণে গুম হওয়া থেকে বেঁচে গেছি।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, আপনি আমার মা। মা আমি অসহায়। পরিবার ও বাচ্চা নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। আমি গত দুই সপ্তাহ ধরে ঘুমাতে পারছি না। আমাকে সুযোগ দেওয়া হোক। কমিশনের যত অভিযোগ রয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে পারব। সকল ডকুমেন্টস আমার কাছে রয়েছে। আমাকে সরাসরি অপসারণ করে দুদকের আসার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি আসলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট হিসেবে আসতে পারব।
দুঃখজনক হলেও সত্যি আমি অপসারিত হওয়ার পরও বিভাগীয় মামলার হাজিরা দিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার কাছে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতি যে দুদকের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে হাজিরা দিতে এসেছি। আপনারা জানেন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমি অপসারিত হওয়ার পরও বিভাগীয় মামলায় হাজিরা দিচ্ছি। এটা আইনের দৃষ্টিতে কতটুক সাম্য আমি বলতে পারব না। তবে এটা নিয়ে আমি বিব্রত। আমার বিরুদ্ধে তিনটি ডিপি চলমান রয়েছে। প্রথমটা হলো ব্যাংক হিসাব নো-ডেবিট সংক্রান্ত, দ্বিতীয়টা নথি হস্তান্তরে বিলম্ব কেন ও তৃতীয়টা হলো দেরিতে কর্মস্থলে যোগদান কেন?
আজকের বিভাগীয় মামলার বিষয়বস্তু হলো আমি নথি হস্তান্তরে দেরি করেছি কেন? যার তদন্তের দায়িত্বে আছেন উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান। আমি সশরীরে হাজির হয়ে, যাবতীয় প্রমাণ তার কাছে দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি বলতে চাই, আমার কাছে ১৩০টি নথিপত্র ছিল। মামলাগুলো অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও হাই-সেনসিটিভ ছিল। ছয়টি আলমারিতে সেগুলো ছিল। তা আরেকজনকে বুঝিয়ে দেওয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়। পটুয়াখালী থেকে আমাকে ফাইল বুঝিয়ে দিতে আসতে দেওয়া হয়নি। গত ২২ আগস্ট নির্দেশনা পাওয়ার পর আমি পাঁচ দিন ধরে নথিগুলো বুঝিয়ে দিই। যারা ফাইলগুলো বুঝে নিয়েছেন, তাদের জিজ্ঞেস করলে মূল ঘটনা জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমার ঊর্ধ্বতনদের মিসগাইড করা হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চাকরিবিধি অনুযায়ী কমিশন বরাবর আদেশ রিভিউ করার জন্য আবেদন করেছি। আশা করি, কমিশন আমার আবেদন গ্রহণ করবে এবং ন্যায় বিচার পাব।
উল্লেখ্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে অপসারণ করার কথা বলা হয়। পর দিন কমিশনের প্রধান কার্যালয়সহ ২১ জেলায় দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ওই বিধি বাতিল এবং অপসারণের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেন।