Tuesday, September 17, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeবাংলাদেশইভিএম চান না বিশিষ্টজনরা

ইভিএম চান না বিশিষ্টজনরা

সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় হিসেবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকেই (ইভিএম) দায়ী করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, নির্বাচন ব্যবস্থায় ইভিএম যত ‘সমস্যা’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ না করে, নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) নির্বাচন ভবনের সভা কক্ষে বেলা সোয়া ১১টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৈঠকে তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসির সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আমন্ত্রিত ৩৯ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১৯ জন। সংলাপে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিডিপি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ইভিএমের ব্যবহার অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। এটা থেকে দূরে থাকা ভালো। ইভিএম ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে। ঝুঁকি নিয়ে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত নয়। নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনাই আপনাদের মূল চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন কি-না তা দেখা যাবে। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। আর প্রতিবন্ধকতা এলে পদত্যাগের সাহস রাখবেন। সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইভিএম ব্যবহার করলেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। তাই এটি ব্যবহার না করে আপনারা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করবেন। লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ যন্ত্রে যে ম্যানুপুলেট করা যায় না, তা নিশ্চিত না করে ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ইভিএম সবসময় বিতর্কিত। এই বিতর্কের সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলব, ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিনা টেন্ডারে কীভাবে ইভিএম এলো। ইভিএম নিয়ে একজনের এত উৎসাহ কেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। কোনোভাবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। চাইলে ৫ থেকে ১০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে। তবে এটা না হওয়াই ভালো।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরণ, কেমন নির্বাচন হবে, এ নিয়ে বিদ্যমান আইন-বিধিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কি না তা চিহ্নিত করুন আপনারা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আপনাদেরই নিতে হবে। সরকারের অনুগত না থেকে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে যেতে হবে। প্রয়োজনে ইস্তফা দেবেন। সব অংশীজন, ভোটার, আমরা আপনাদের পক্ষে আছি।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। তবে ক্ষমতায় থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। গত দুটি নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়টি সরকার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংলাপে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বেগম শাহীন আনাম, নিজেরা করির কো-অর্ডিনেটর খুশী কবির, বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, গভর্নেন্স অ্যান্ড রাইট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জহুরুল আলম, ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক শামীম রেজা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ।

উল্লেখ্য, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরির জন্য বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৩ মার্চ ৩০ জন শিক্ষাবিদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিল ইসি। যদিও ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ওই দিন উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৩ জন। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বেলা সোয়া ১১টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে সংলাপে বসে কমিশন। সংলাপে মতামত দেওয়ার জন্য ৩৯ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এতে অংশ নেন ১৯ জন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments