মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেনকে চিঠি লিখে নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক জবাব পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। গত ৩১শে ডিসেম্বর মন্ত্রীর স্বাক্ষর সংবলিত ওই চিঠি ওয়াশিংটনে গেছে বলে সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে, সেই চিঠিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ও অ্যাকশনের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মন্ত্রী। সেইসঙ্গে দুঃসাহসিক এসব কাজে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)সহ অন্য বাহিনীগুলোর অবদানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন তিনি। গত ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তুলে র্যাব’র ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাইডেন প্রশাসন।
এটি বাংলাদেশের ওপর প্রথম মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। যা সরকারকে বেশ চাপে ফেলেছে বলে মনে করছেন দেশি- বিদেশি বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং কূটনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ তৈরি হয়েছে। যদিও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। সে সময় মন্ত্রী বলেছিলেন, নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি দুঃখজনক। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। এ কারণে আমরা বিশ্বাস করি ওই নিষেধাজ্ঞা আমাদের সার্বিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
মন্ত্রী মোমেন এ-ও জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের ৩ মন্ত্রীকে আলাপ- আলোচনার যে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা সেটি করছেন। মন্ত্রী বলেছিলেন আলাপ-আলোচনা করেই তারা এর আনুষ্ঠানিক জবাব পাঠাবেন। এমনি হুট করে উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না বলেও সেদিন মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তাছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাজারও ঘটনা ঘটার পাল্টা অভিযোগও তুলেছিলেন।
বলেছিলেন, প্রতিবছর তাদের পুলিশ হাজারখানেক লোক মেরে ফেলে, গুলি করে মারে। অর্থাৎ আইনবহির্ভূত হত্যা করে। আমাদের কালেভদ্রে এক-দুইজন মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হয়। মার্কিন প্রতিবেদনের দাবি, বাংলাদেশে ১০ বছরে ৬০০ লোক নিখোঁজ হয়েছে। কোথায় ছয় লাখ আর কোথায় ছয় শ? প্রশ্ন রেখে মোমেন বলেছিলেন, আমেরিকায় যে এত লোকজন মারা যায়, এজন্য তাদের সংবাদমাধ্যম খুব বেশি মাথা ঘামায় না। কারণ তারা মনে করে, পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদের লাইন অব ডিউটিতে কাজ করেছে।
আমেরিকায় যে ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হয়, বা অন্যরা মারা যায়, তার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষের কারো শাস্তি হয়েছে বলে তিনি শুনেননি দাবি করে বলেছিলেন, যে সংস্থাটির ওপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে বৈশ্বিক নীতি, অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদ দমন- সেটিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, মাদক চোরাচালান, সেটিও যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটা বড় ইস্যু। সেটিতেও তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। র্যাব দুর্নীতিপরায়ণ নয় এবং টাকা- পয়সা দিয়ে কেউ র্যাবকে ব্যবহার করতে পারে না দৃঢ়তার সঙ্গে এমন দাবি করে মন্ত্রী বলেছিলেন, ফলে র্যাব দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর দাবি করে মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কিছু কিছু লোকের প্ররোচনায়, কিছু সংস্থা এবং এনজিও’র মিথ্যা তথ্যে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবো।
আমেরিকার সব সিদ্ধান্ত সঠিক- এমন নয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেছিলেন, এর ভুরিভুরি উদাহরণ রয়েছে। তারপরও আমরা আলোচনা করবো এবং আশা করি ওই দেশে পরিপক্ক লোকজন আছেন, সরকারে জ্ঞানী লোকজন আছেন এবং তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন। সরকারের একটি সূত্রের দাবি রাজনৈতিক বক্তব্য যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি চায় না ঢাকা। ওয়াশিংটনও এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে। আর এজন্য আলোচনার চেষ্টা চলছে।
সেই বিবেচনায় পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীর মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশ সুচিন্তিত একটি জবাব পাঠিয়েছে। যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বরাবর পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। বিস্তৃত বর্ণনা সংবলিত ওই চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, চিঠিটি আরও এক সপ্তাহ আগেই পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু নানা কারণে তা বিলম্ব হয়েছে। চিঠিটি ই-মেইল মারফত ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের স্টেট ডিপার্টমেন্টে চিঠিটি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।