পণ্য পরিবহণের গাড়ি থেকে একটি নুডুলসের প্যাকেট আর নারিকেল তেল চুরির অভিযোগে সাদ্দাম হোসেন নামে এক কিশোরকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ী আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে। এ সময় সাদ্দামকে স্টিলের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর শহরের হাফিজ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে সাদ্দামকে উদ্ধার করে থানায় নেয় পুলিশ। কিশোর সাদ্দাম হোসেন (১৮) আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার থানাপাড়ার আকমল হোসেনের ছেলে।
এদিকে সাদ্দামকে খুঁটিতে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো একটি ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের হাতে হাতে। এর পর নজরে পড়ে পুলিশের। নির্যাতনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে আটক করেছে পুলিশ। নির্যাতিত সাদ্দাম বা তার পরিবারের কেউ অভিযোগ জানালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার যুবক সাদ্দাম হোসেনও একজন অপরাধী। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার হাফিজ মোড়ে শেখ ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের পরিবেশক শেখ আমানুল্লাহ। বিভিন্ন দোকানের অর্ডারের পণ্য ডেলিভারির জন্য মঙ্গলবার দুপুরে গাড়িতে মালামাল তুলছিলেন শেখ ট্রেডার্সের কর্মচারীরা। এ সময় ওই গাড়ি থেকে এক প্যাকেট নুডুলস ও নারিকেল তেল নিয়ে দৌড় দেয় সাদ্দাম হোসেন। বিষয়টি দেখে স্থানীয় কয়েকজন তার পিছু নেয়। ধাওয়া করে সাদ্দামকে ধরে শেখ ট্রেডার্সের মালিক আমানুল্লাহর নিকট হস্তান্তর করে।
পরে আমানুল্লাহ নিজেই দোকানের সামনের একটি খুঁটিতে সাদ্দামের দুই হাত পেছনে বেঁধে রাখেন। এর পর স্টিলের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ ঘটনা দেখে সেখানে জড়ো হতে থাকেন লোকজন। সাদ্দামকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন আমানুল্লাহ। ব্যাপক জেরার সঙ্গে সঙ্গে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।
মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো নির্যাতনের ঘটনাটি অনেকেই দেখেছেন। তবে কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ বলেছেন- কিশোর সাদ্দাম হোসেনের মা খুবই গরিব। তিনি রাস্তার ধারে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। অভাবের তাড়নায় হয়তো সাদ্দাম একটু নুডুলস চুরি করে থাকতে পারে। তাই বলে একজন ব্যবসায়ী তাকে যেভাবে নির্যাতন করেছেন, তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
প্রকাশ্যে নির্যাতনের চিত্র দেখা দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন বলেন, খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পাইপ দিয়ে মারধর দেখে ভেবেছিলাম বড় ধরনের কোনো অপরাধী। কারণ আরও অনেকেই দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলেন। এ জন্যই নির্যাতনকারী ওই ব্যক্তিকে থামানোর জন্য কোনো কিছু বলিনি। পরে জানতে পারি ওই কিশোর সামান্য নুডুলস নিয়ে যাচ্ছিল। এই অপরাধের কারণে এ ধরনের নির্মম নির্যাতন কখনই মেনে নেওয়া যায় না। নির্যাতনকারী ওই ব্যবসায়ীর শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে সাদ্দামকে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বর্বরোচিত এ ঘটনার ভিডিও দেখে হতবাক সুশীল সমাজের লোকজন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা বলেন, অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, তার জন্য আইন আছে। আর মারধর করারও একটা সীমা আছে, প্রকাশ্যে দোকানের খুঁটিতে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমানুল্লাহর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তারা।
নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমার প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে আমি অতিষ্ঠ। কিছুতেই চোর ধরতে পারছিলাম না। আজ কিছু নারিকেল তেল ও নুডুলসের প্যাকেট চুরির সময় সাদ্দামকে হাতেহাতে ধরে স্থানীয়রা আমার কাছে নিয়ে আসেন। তবে দোকানের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করা আমার অন্যায় হয়েছে।
আলমডাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মুজিবুল ইসলাম বলেন, সাদ্দামের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আছে। এর আগেও শেখ ট্রেডার্স থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার চুরির সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে। পরে আমানুল্লাহ দোকানের খুঁটিতে বেঁধে সামান্য মারধর করেছে বলে শুনেছি। তবে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি অন্যায় হয়েছে তার। মারধর না করে পুলিশে দেওয়া উচিত ছিল। চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বলেন, দোকানের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা যদি সত্যি হয়, তা হলে এটিই তো বড় অপরাধ। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। অপরাধীকে অবশ্যই আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের শিকার কিশোর বা তার পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে মানবতা ফাউন্ডেশন থেকে তাকে বিন্যামূল্যে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সাদ্দামকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়। তবে নির্যাতনের বিষয়টি তখন জানা ছিল না। পরে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও দেখেছি। এভাবে কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। রাতেই নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় সাদ্দাম বা তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করলে আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ছাড়া চুরির ঘটনায়ও এখনও কেউ অভিযোগ দেননি।