উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা, করতোয়া, বড়াল ও হুড়াসাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছ। এতে বিভিন্ন উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বিপুল পরিমাণ বোরো ধানের জমি ডুবে গেছে। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর ও চৌহালীর চরাঞ্চলের নিচু এলাকার প্রায় ৫০০ বিঘা জমির কাঁচা ও আধপাকা ধান ডুবে গেছে। অসহায় কৃষক কাঁচা বা আধপাকা ধান কেটে গরু-ছাগলকে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন।
শাহজাদপুর পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী প্রায় আড়াইশ বিঘার বেশি জমির বোরো ধান ডুবে গেছে। জমিতে পানি ঢুকেছে কৈজুরি, সোনাতনী, গালা ও জালালপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু এলাকায়ও। এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী তিল, বাদাম ও কাউনি খেত ডুবে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সোনাতনী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, হঠাৎ নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে আমাদের এ এলাকার অন্তত ১১৫ বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে।
এ ধান দিয়ে বছরের অর্ধেক সময়ের খাদ্যের চাহিদা মেটান কৃষক। ধান ডুবে যাওয়ায় এখন তারা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। চুনিয়াখালিপাড়া ও শাহজাদপুর থানার ঘাট ব্রিজের কাছে নিচু জমি ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকের অভাবে কৃষক নিজে এবং বাড়ির বৌ-ঝিরা ধানকাটা ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত। পুরো এলাকা ডুবে যাওয়ায় সেখানে ধান কাটার হিড়িক পড়ে গেছে।
চুনিয়াখালিপাড়া গ্রামের আয়নাল প্রামাণিক, শহিদুল ইসলাম ও নাহিদ প্রামাণিকসহ একাধিক কৃষক জানান, প্রতিবছর সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে নদীতে পানি বাড়ে। কিন্তু এ বছর চৈত্রের শুরুতেই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা অস্বাভাবিক ও আকস্মিক ঘটনা। এতে এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্ধেক বছরের খাদ্যের যোগান দেওয়া বোরো ধান ডুবে গেছে।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, উপজেলার ২০০ বিঘার ওপরে বোরো ধান ডুবে গেছে। এর মধ্যে ১১৫ বিঘা জমির ধান পুরোপুরি ডুবে গেছে এবং বাকি জমির ধান আংশিক ডুবেছে। এতে কয়েকশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল লতিফ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত ১০/১২ দিন ধরে যমুনা ও এর শাখা নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আ জ ম আহসান শহিদ সরকার বলেন, হঠাৎ যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নদী বেষ্টিত চার উপজেলার প্রায় সাড়ে ৭০০ বিঘা বোরো ধান ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা যায়নি।