পেশায় ছিলেন একজন সাংবাদিক। কিন্তু রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর দেশকে রক্ষায় হাতে তুলে নেন অস্ত্র। সাংবাদিক থেকে দেশপ্রেমিক যোদ্ধায় পরিণত হওয়া এই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন যুদ্ধের ময়দানেই। ইউক্রেনীয় সাংবাদিকের নিহত হওয়ার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার (৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
নিহত ওই ইউক্রেনীয় সাংবাদিকের নাম অলেক্সান্ডার মাখভ। ৩৬ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ইউক্রেনের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টার ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে হামলাকারীদের মোকাবিলায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, সাংবাদিক থেকে যোদ্ধায় পরিণত হওয়া ইউক্রেনীয় টেলিভিশন প্রতিবেদক ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ামের বাইরে এক লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। এএফপি বলছে, রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত দুই মাসে এ নিয়ে ৮ সাংবাদিক প্রাণ হারালেন।
নিহত অলেক্সান্ডার মাখভ তার পেশাগত জীবনে অ্যান্টার্কটিকা থেকেও রিপোর্ট করেছিলেন। এছাড়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দু’টি এলাকায় রুশ-ভাষী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিদ্রোহ করার পর সৃষ্ট সংঘাতেও লড়াই করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে দেওয়া ওই ভিডিওবার্তায় অলেক্সান্ডার মাখভকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘তিনি একজন দেশপ্রেমিক ও একনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন এবং সবসময় অহংকারহীন ছিলেন। এছাড়া (তিনি) অত্যন্ত সাহসী ছিলেন এবং (লড়াইয়ে) যারা সম্মুখসারিতে থাকেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।’
উল্লেখ্য, রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নিহত হওয়ার তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। আগ্রাসন শুরুর পর গত মার্চ মাসের শুরুতে ইউক্রেনীয় টিভি চ্যানেল লাইভ-এর ক্যামেরা অপারেটর ইয়েভেনি সাকুন কিয়েভের টিভি ট্রান্সমিশন টাওয়ারে হামলায় নিহত হন। তিনি স্প্যানিশ বার্তাসংস্থা ইএফই-তেও কাজ করেছেন।
এর দুই সপ্তাহ পরে ৫০ বছর বয়সী মার্কিন সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ব্রেন্ট রেনডকে কিয়েভের বাইরে ইরপিন শহরে চিত্রগ্রহণ করার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর দু’দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের দুই সাংবাদিক নিহত হন। তাদের নাম পিয়েরে জাকরজেউস্কি এবং ওলেক্সান্দ্রা কুভশিনোভা। রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে হোরেঙ্কা নামক স্থানে সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়িতে গোলা আঘাত হানলে ৫৫ বছর এবং ২৪ বছর বয়সী এই দুই সাংবাদিক প্রাণ হারান।
এরপর মার্চের শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলায় রাশিয়ার এক সাংবাদিক নিহত হন। নিহত ওই সাংবাদিকের নাম ওকসানা বাউলিনা। রুশ সামরিক বাহিনীর গোলাবর্ষণে প্রাণ হারান তিনি। নিহত এই সাংবাদিক রাজধানী কিয়েভ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ থেকে ইনভেস্টিগেটিভ ওয়েবসাইট দ্য ইনসাইডারের জন্য রিপোর্ট করছিলেন।