স্টাফ রিপোর্ট:: সিলেটের কানাইঘাটে প্রকাশ্যে ফরিদ উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে করেছেন আদালত। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারী) তাদের আদালতে হাজির করে ৮ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারা হলেন- নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন, কাওছার আহমদ ও মোস্তাক আহমদ। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের শেরপুর থেকে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাওছার আহমদকে সিলেটে দক্ষিণ সুরমা ও মোস্তাক আহমদকে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯।
উল্লেখ্য, কানাইঘাটের ফরিদ উদ্দিন বাইকে করে গত সোমবার বিকেলে তার ভায়রা ভাই শাহীন আহমদকে নিয়ে স্থানীয় মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বড়খেওড় এফআইবিডিবি স্কুলের সামনে আসামাত্র কয়েকজন দুর্বৃত্ত ফরিদ উদ্দিনের গতিরোধ করে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফরিদ। দুর্বৃত্তদের হামলায় ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে থাকা তার ভায়রা ভাই শাহীন আহমদও আহত হন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যায় কানাইঘাট থানার একদল পুলিশ। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারী) ময়না তদন্তের পর ফরিদ উদ্দিনের লাশ সন্ধ্যার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পরদিন বুধবার (২ ফেব্রুয়ারী) এ ঘটনায় নিহত ফরিদ উদ্দিনের বাবা মো. রফিকুল হক কানাইঘাট থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়ের পরদিন বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার ও সিলেট থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া বরাত দিয়ে র্যাব-৯ এর অধিনায়ক বলেন, নিহত ফরিদ ও গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই একই এলাকার বাসিন্দা ও পরষ্পরের আত্মীয় হন। এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এনিয়ে আগেও উভয়পক্ষের মধ্যে মামলা-হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, নাজিম উদ্দিন সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাদের বিরোধ ফের চাঙ্গা হয়ে উঠে। নাজিম ও তার অনুসারীরা ফরিদকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। ঘটনার দু’দিন আগে এ নিয়ে ফরিদ তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে নাজিমের ভাই এনাম কমেন্ট করে ফরিদকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার দিন গত ৩১ জানুয়ারী বিকেলে ফরিদ তার আত্মীয় শাহিনকে নিয়ে মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে বাইকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে এফআইভিডিবি স্কুলের সামনে যাওয়ামাত্র পার্শ্ববর্তী টিলা থেকে বড় ধারালো দেশীয় অস্ত্র হাতে দু’জন মুখোশধারী ফরিদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় দুর্বৃত্তরা ফরিদের একটি পা কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়। ফরিদের দু’পায়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
ফরিদের আত্মীয় শাহীনও হামলার শিকার হন। তবে তিনি ঘটনাস্থল থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন এবং স্বজনদের খবর দেন।
নিজাম এবং মোস্তাকের পরিকল্পনায় তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ফরিদকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন নিজাম মেম্বার এবং মোস্তাক নিজেদেরকে এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার বাইরে রাখার প্রমাণ দেখাতে তারা সিলেট শহরে চলে আসেন। মূলত; সিলেট শহরে থেকে হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট বাকি দু’টি টিমের কার্যক্রম সমন্বয় করছিলেন এই দু’জন। ২য় গ্রুপটি ভিকটিম ফরিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো এবং ৩য় গ্রুপ পূর্ব থেকে নির্ধারিত জায়গা অর্থাৎ এফআইভিডিবি স্কুলের পাশে জঙ্গলপূর্ণ একটি টিলায় ওৎ পেতে পেতে সুযোগ মতো হত্যাকান্ডটি ঘটায়।