পুলিশ ভেরিফিকেশন ও ডোপ টেস্টের ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই আসল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে আসছিল একটি দালাল চক্র। এ জন্য চক্রটি ১৪২টি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলকে ব্যবহার করতো। অনেক অপরাধীও এ চক্রের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে চুরি ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করছে। এ চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এ দালাল চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। এরআগে, মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- লিটন পাইক, সুজন পাইক, হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, হুমায়ুন কবির, আব্দুল খালেক, আব্দুল্লাহ রনি, সোহেল রানা, সোহাগ, মো. নুরনবী ও মো. হুমায়ুন কবির। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৫৯টি বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফরম ও ডোপ টেস্ট ফাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে। ফরমে আবেদনকারীদের ছবি সংবলিত তথ্য ও বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈমা বেগম, এনামুল হক ইমন নামের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সিলমোহরের সিল রয়েছে।
ডিবি প্রধান বলেন, বৈধ লাইসেন্স ব্যবহার করে গাড়ি চালানোয় অনভিজ্ঞ চালকদের হাতে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি অনেক অপরাধী চক্র খাদ্য ও গার্মেন্টস পণ্য চুরি এবং সড়কে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ও চুরি, ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের তথ্য বের হয়ে আসে। পরে রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোড এলাকায় একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে কয়েকজন দালাল নিজেরাই বিআরটিএ অফিস খুলে বসেছেন। এই অফিসে বসে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের পুলিশ ভেরিফিকেশন, ডোপ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতেন। এসব ভুয়া নথি দিয়েই দালালরা টাকার বিনিময়ে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দিতেন।
অতিরিক্ত কমিশনার আরো বলেন, এসব লাইসেন্স আসল হলেও ব্যবহারকারীর ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য ছিল ভুয়া। ফলে তারা সড়কে গাড়ি চালানোর নাম করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যেতেন। এই দালাল চক্রের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তারা বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সিলমোহরযুক্ত ও স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে সেগুলো দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে আসছিলেন। সারাদেশে ১৪২টি ড্রাইভিং লাইসেন্স স্কুল আছে এবং এদের অধিকাংশ এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত।
বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকজন কর্মকর্তার নাম আমরা পেয়েছি। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বিআরটিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হবে।***