বিপিএল, আইপিএল, সিপিএলসহ যেকোনো ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে প্রকাশ্যেই চলছে অনলাইন জুয়া (বেটিং)। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত বিভিন্ন বেটিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসব জুয়া পরিচালিত হয়ে আসছে। এজন্য ওয়েবসাইটগুলোর সুপার এজেন্টরা বাংলাদেশে নিয়োগ করে মাস্টার এজেন্ট। তারা আবার নিয়োগ করে লোকাল এজেন্ট। পরে মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে বেটিং পরিচালনা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জুয়া খেলতে লোকাল জুয়াড়িদের কিনতে হয় পিবিইউ (ভার্চুয়াল কারেন্সি)। পিবিইউ কেনাসহ অনলাইন জুয়ার সব লেনদেন করা হয় মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে (ই-ট্রানজেকশন)। অনলাইনে এভাবে জুয়া পরিচালনা করে বিদেশে ৩০-৩৫ কোটি টাকা পাচার করেছে একটি চক্র।
এই চক্রের দুই মাস্টার এজেন্টসহ ৩ জনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মাস্টার এজেন্ট তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু ও রানা হামিদ এবং তাদের সহযোগী সুমন মিয়া। শনিবার রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ তাদের গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৬-০৩৫১), ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল, ৫টি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক একাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায়ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় আদালত তাদেরপ্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত িি.িসধুধঢ়নঁ.পড়সওিি.িনবঃনুুঁ৩৬৫.ষরাবনামক বেটিং ওয়েব সাইটের সুপার এজেন্টরা বাংলাদেশে নিয়োগ করে মাস্টার এজেন্ট। গ্রেফতার তরিকুল ও বাবু তাদের সহযোগী গ্রেফতার সুমন মিয়া ও পলাতক আসামি সাথী আক্তারসহ অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০/৬০ জনের সহায়তায় ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) খেলার সাইট পরিচালনা করে আসছিল। তরিকুল ও বাবু মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি পিবিইউ ৬০ টাকার বিনিময়ে কিনতেন।
পরে সাইটগুলোর ব্যবহারকারীদের কাছে প্রতিটি পিবিইউ ১৫০ টাকার বিনিময়ে এবং লোকাল এজেন্টের কাছে প্রতিটি পিবিইউ ১০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। তরিকুল ও বাবু ৮/১০ লাখ টাকার বিনিময়ে লোকাল এজেন্ট নিয়োগ করে যা পিবিইউ কারেন্সিতে দিতেন। পরে লোকাল এজেন্টরা ব্যবহারকারীদের কাছে ১৫০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। অবৈধ অর্থের এ লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা হয়। এখানে কারেন্সি হিসাবে পিবিইউ সাইটের নিজস্ব ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি ব্যবহার করতো। ব্যবহারকারীরা সিয়াম (সিয়াম আহমেদ) ও আলী (আশি খান) নামের দুটি ফেক ফেইসবুক আইডির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো।
এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের টাকা গ্রেফতার তরিকুল ও বাবুর মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিল। এদের মাধ্যমে প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। তারা নিজেরাও জুয়া পরিচালনা করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে তাদের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক একাউন্টগুলোতে প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তরিকুল ও বাবুর প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস নাই। তারা বেটিং সাইট থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মিলেছে।
ডিবি প্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, আইপিএল ও বিপিএলসহ মূলত ক্রিকেট খেলাকে ঘিরেই এই বেটিং সাইট পরিচালিত হয়। বেটিং সাইটগুলোতে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচটি কোন দল জিতবে তার উপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেটকৃত রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিং এর পিবিইউ পরিমাণের তিনগুণ বা বেটিং এর শর্ত অনুসারে পিবিইউ ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং বা অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয়।
রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতে এই সাইটগুলোর এডমিন রয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বন্ধ করতে গেলে তারা অন্য সাইটে চলে যাবে। আমরা বিটিআরসির মাধ্যমে এক সঙ্গে কাজ করব। মনিটরিং আরো বাড়াতে হবে। তবে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে এটা প্রতিরোধে কাজ করা উচিত। কারণ যারা বেটিং এ অংশ নেয় তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এটা নেশার মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।