বাংলাপেইজ ডেস্ক:
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ইউরোপের ভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। যারা বিভিন্ন উপায়ে দেশ গুলোতে প্রবেশের পর আশ্রয় প্রার্থনা করেন।এর মধ্যে গত বছর ইউরোপের দেশগুলোতে রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশি আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন।তবে যত আবেদন জমা পড়েছে তার ৯৬ শতাংশই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আশ্রয় আবেদনের স্বীকৃতির বিবেচনায় বাংলাদেশিরা রয়েছেন সর্বনিম্নের তালিকায়।২০২১ সালে ‘ইইউ প্লাস`(ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, লিশটেনস্টাইন) দেশগুলোতে বিভিন্ন দেশের অভিবাসী, শরণার্থীদের মোট ছয় লাখ ১৭ হাজার ৮০০টি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে। এই সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এজেন্সি ফর অ্যাসাইলামের (ইইউএএ) আশ্রয় আবেদনের প্রবণতা সংক্রান্ত বার্ষিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।
আশ্রয় আবেদন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন আফগান ও সিরীয়রা। তালিকার শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোরই রয়েছে প্রাধান্য।প্রথম পাঁচে রয়েছে সিরিয়া,আফগানিস্তান,ইরাক,পাকিস্তান ও তুরস্ক।ইউরোপে আশ্রয় আবেদনে বাংলাদেশিরা আছেন ষষ্ঠ অবস্থানে। গত বছরের চেয়ে তাদের আবেদনের হার তিন চতুর্থাংশ বেড়েছে। এদের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বাংলাদেশিও আছেন।২০ হাজার বাংলাদেশি: নিজ দেশে বর্ণ,ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনৈতিক কারণে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে বা কারও জীবন হুমকির মুখে থাকলে তিনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইউরোপের দেশগুলোতে সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করতে পারেন। ২০২১ সালে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি এমন আশ্রয় আবেদন করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর থেকে এটি বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ আবেদনের রেকর্ড।
ইইউএএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী,২০২০ সালের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালে বেশির ভাগ আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে বছরের শেষার্ধে। প্রতি ১০টির মধ্যে নয়টিই ছিল প্রথমবারের মতো আবেদন। উল্লেখ্য, প্রথমবার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল বা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারেন আশ্রয়প্রার্থীরা।ইইউএএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে ২৭ হাজার ৩০০ জন আশ্রয় আবেদনকারী তাদেরকে ‘অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে দাবি করেছেন, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদের মধ্যে অর্ধেক বা প্রায় ১৩ হাজার জনই আফগান। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সিরিয়ানদের আবেদনের সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজার। এরপরই রয়েছেন বাংলাদেশিরা। তাদের এমন প্রায় ১৪০০ আবেদন জমা পড়েছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০২০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা ১৭৪ শতাংশ বেশি। তবে বাংলাদেশি মোট আবেদনকারীর হিসেবে ‘অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্কের’সংখ্যাটি সাত শতাংশ।গত বছর বিভিন্ন দেশের প্রকাশিত প্রতিবেদনেও অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি আশ্রয় আবেদনকারীদের তথ্য উঠে আসে।গত জুনে সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে ইটালিতে পাড়ি জমানো ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক ওঅভিভাবকহীন’ অভিবাসীর সাড়ে ২২ দশমিক শতাংশই বাংলাদেশি, যাদের সংখ্যা এক হাজার ৫৫৮ জন।এটি ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪ ভাগ বেশি।
আবেদন বেশি,স্বীকৃতি কম: ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের প্রায় ১৬ হাজার ৩০০টি আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে এই সংখ্যা দুই তৃতীয়াংশ বেড়ে ২০১৮ সালের রেকর্ড পরিসংখ্যানের কাছাকাছি পৌঁছেছে।তারপরও ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ১২ হাজার ১০০টি আবেদন ঝুলে ছিল। এর মধ্যে পাঁচ ভাগের তিন ভাগ আবেদন করা হয়েছে ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে। ইইউ প্লাস দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের আবেদন যেমন বেড়েছে,তেমনি বেড়েছে প্রত্যাখ্যানের হারও।২০২১ সালে ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র চার শতাংশ আবেদনকারী শরণার্থী বা ‘সাবসিডিয়ারি প্রটেকশনের’অধীনে ইউরোপে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন। ২০২১ সালে সব দেশ মিলিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণের গড় হার ছিল ৩৫ শতাংশ।আবেদন গৃহীত হওয়ার মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন ইরিত্রিয়ান (৮১%), ইয়েমেনিস (৭৯%),বেলারুশ (৭৫%), সিরিয়ান (৭২%) ও আফগানরা (৬৬%)। অন্যদিকে প্রত্যাখ্যাতদের মধ্যে উপরের দিকে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।সূত্র: ডয়চে ভেলে