ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দাপুটে শুরু বাংলাদেশ দলের। কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে পরিসংখ্যান বা শক্তিমত্তা, দুই দিক থেকেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের থেকে এগিয়ে আফগানিস্তান। সেসব সমীকরণ একেবারেই টিকল না মাঠের ক্রিকেটে। নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে কুপোকাত আফগানরা। তার সঙ্গে যোগ দিলেন আরেক বাঁহাতি সাকিব আল হাসান। দুই স্পিনারের স্পিন জাদুতে ৬১ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে লিটন দাসের অর্ধশতলের উপর ভর করে স্কোর বোর্ডে ১৫৫ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। এরপর তিন বাঁহাতি বোলার, নাসুম, সাকিব আর শরিফুলের বোলিং তোপে মাত্র ৯৪ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। ৬১ রানের বিশাল ব্যবধামে ম্যাচ জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারতেন দুই আফগান ওপেনার রহমতউল্লাহ গুরবাজ ও হযরতউল্লাহ জাজাই। বিধ্বংসী হয়ে উঠার আগেই এই দুই দুজনকে ফিরিয়ে গ্যালারিতে উল্লাসের জোয়ার বইয়ে দেন নাসুম আহমেদ। ইনিসের প্রথম ওভারে শূন্য রানে গুরবাজ ও তৃতীয় ওভারে জাজাইকে ৬ রানে ফেরান। সুবিধা করতে দেননি তিনে দারউইশ রাসুলিকেও। জাজাইকে আউট করা ওভারেই রাসুলিকে ফেরান ২ রানে।
নাসুম নিজের বোলিং ঘূর্ণিতে পরে ফেরান করিম জানাতকে। ৬ রান করে সাজঘরে করিম। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ৭ রানে চার উইকেট নেন তিনি। টানা চার ওভারের স্পেলে ১০ রানে বোলিং শেষ করেন এই স্পিনার। নাসুমের তাণ্ডবের পর ধীর গতিতে ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন নাজিবউল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবী। তাদের ৩৭ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। ২৬ বলে ২৭ রান করে ফেরেন নাজিবউল্লাহ।
উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকার মুখে আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীকে নিজের পরের ওভারেই ফেরান সাকিব। ১৯ বলে ১৬ রানে আউট নবী। শেষদিকে শরিফুলের তাণ্ডবে মাত্র ৯৪ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা। এতে ৬১ রানের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ দল। নাসুম ৪, শরিফুল ৩ এবং সাকিব নেন ২ উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ আলোচিত মুনিম অভিষেক ম্যাচের প্রথম বল থেকেই চড়াও হন। যদিও ফজল হন ফারুকির করা লেগ স্টাম্পের বাইরের সেই বলটি ঠিকঠাক সংযোগ করাতে পারেনি। আম্পায়ার ওয়াইডের সংকেত দেন। সে বলে না হলেও মুনিম রানের খাতা খোলেন বাউন্ডারি দিয়েই। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে কাভারের উপর দিয়ে মেরে ৪ রান বের করেন মুমিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটির তার প্রথম রান।
তবে আরেক ওপেনার নাঈম শেখ এ ম্যাচে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিং করেন। সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ তিনি। আরেকবার উঠল তাকে একাদশে কেন রাখা হয়েছে সে প্রশ্ন। নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে ৫ বল খেলে ২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন বাঁহাতি নাঈম। নাঈমের আরেক দফা ব্যর্থতার দিনে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ ছিল মুনিমের সামনে। তবে শুরুটা ভালো পেলেও সেটি টানতে পারেননি এই ডানহাতি। নিজের প্রথম ওভার হাত ঘোরাতে এসে মুনিমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন রাশিদ খান। ১৮ বলে ৩ চারে ১৭ রানে ফেরেন মুনিম।
ওপেনিং ছেড়ে তিনে নেনে লিটন দাস বেশ স্বাচ্ছন্ধ্যে ব্যাট করেন। সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজের ফর্ম টেনে আনেন টি-টোয়েন্টিতে। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি সাকিব আল হাসান। স্পিনার কাইস আহমেদকে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মুজিব উর রহমানের হাতে। ৬ বলে ৫ রান করে আউট সাকিব। এদিন তার ব্যাটে ছিল না কোনো বাউন্ডারির। সাকিব আউট হলে তৃতীয় উইকেটে ভাঙে ২২ রানের পার্টনারশিপ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ টি-টোয়েন্টিতে দেখেশুনে শুরু করলেও নিজের ইনিংসটাকে টানতে পারেননি। ১১তম ওভারে আজমতুল্লাহর বল তার পায়ে লাগলে আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন। ১ ছয়ে ৭ বলে ১০ রান করে আউট হন টাইগার অধিনায়ক। নিয়মিত উইকেট হারালেও পর প্রান্তে রান তোলার গতি সচল রাখেন লিটন। আফগানদের স্পিন অ্যাটাক সুনিপুণভাবে সামলে কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে নিজের ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নেন তিনি।
মাত্র ৩৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছয়ের মারে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন লিটন। যদিও সেই ইনিংসটি থামে ৬০ রানে। ফারুকির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ৪৪ বলে ৬০ রানে। লিটন আউট হলে শেষ ৩ ওভারে ২৯ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করতে নামা আফিফ ত্রিশ রানের গণ্ডি পার করতে পারেননি। ইনিংসের ১৮তম ওভারে আজমতউল্লাহকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৪ বলে ২ চারে ২৫ রানে। শেষদিকে ইয়াসির ৭ বলে ৮, সমান ৭ বল খেলে মেহেদী করেন ৫ রান।
নাসুম আহমদের ২ বলে ৩ এবং শরিফুল ইসলামের ১ বলে অপরাজিত ৪ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের হয়ে ফারুকি এবং আজমতউল্লাহ ২টি করে উইকেট নেন।