বেশ ভালোই চালাচ্ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের ক্ষমতায় টিকে থাকার ‘আধ্যাত্মিক শক্তি’ সেনাকবজের আশীর্বাদে দোর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের ‘পুতুল সরকার’। মাসখানেক আগেও ঠিকই ছিল হিসাবের ষোলোআনা। তার পরেই শুরু হলো সম্পর্কের উচাটন। টানাটানি-মন কষাকষি। কিন্তু কেন এই হঠাৎ ছন্দপতন? কি ভুলে মাথার ওপর থেকে ছায়া হারালেন ইমরান খান? সরে গেল পায়ের তলার মাটি? সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে, সেই নেপথ্য রহস্যটিই তুলে এনেছে মার্কিন দৈনিক ব্লুমবার্গ।
‘বিল গেটসের একটি ভোজের ছবি প্রকাশ করেই যেন পেকে গেল গোল’-শিরোনামে খবরটির শেষ প্যারায় ভয়াবহ একটি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে চলতি বছরের ২৯ নভেম্বরে দ্বিতীয় মেয়াদও ফুরিয়ে যাবে বর্তমান সেনাপ্রধানের। দ্বন্দ্বটার শুরু এখানেই। তলে তলে আরেক দফা সেনাশাসনের স্বপ্ন দেখছেন জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।
ইমরান হটানো নীলনকশা বীজটাও এই স্বপ্ন ভূমি থেকেই। মাস চারেক আগের কথা-পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান লে. জেনারেল নাদিম আনজুমের মনোনয়ন ঘিরে। ইমরান খানের প্রার্থী ছিলেন লে. জেনারেল ফাঈজ হামিদ। চেষ্টাও করেছিলেন অনেক। কিন্তু সেনাপ্রধানের ‘পেশিশক্তি’র কাছে হার মানেন ইমরান। শুরু হয় সম্পর্কের দূরত্ব। ফাটল ধরে পুরাতন আস্থার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমরান খান ক্ষমতায় থাকলে আইএসআইয়ের প্রধান নির্বাচনের সেনাপ্রধানের কাছে সেই হার এবার সুদে-আসলে উসুল করবেন বাজওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘তৃতীয় মেয়াদ’ স্বপ্নে।
২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর, জেনারেল বাজওয়াকে সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। দু’বছর পর বাজওয়ার হাত ধরেই ক্ষমতায় আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বছর ঘুরতেই, ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট ইমরানের হাত দিয়েই নিজের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়ে নেন সেনাপ্রধান বাজওয়া। এতে বাধা দেয় পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট। ২৮ নভেম্বর এক রায়ে, সেনাপ্রধান হিসাবে বাজওয়ার মেয়াদ মাত্র ছয় মাস বাড়ানোর নির্দেশ দেন আদালত। আদেশ আমলে না নিয়ে ৮ জানুয়ারি ২০২০, সংসদের উচ্চকক্ষে ‘পাকিস্তান আর্মি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল-২০২০’ পাশ করে বাজওয়ার তিন বছর মেয়াদ পাকাপোক্ত করেন ইমরান খান।
সব ঠিকই চলছিল। মাঝখানে আইএসআই প্রধান নিয়োগ নিয়ে পরস্পর দুমেরুতে চলে যান বাজওয়া-ইমরান। ইমরানকে ক্ষমতার গদিতে হঠাৎ ঝড় ওঠার নেপথ্য কারণ হিসাবে এই দূরত্বকেই চিহ্নিত করছেন দেশটির সচেতন রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইমরান খানের পুতিনপ্রীতিকেও কাল হিসাবে দেখছেন কূটনীতিকরা। সরকার উৎখাতের বৈদেশিক শক্তির হাত আছে বলে রোববার ইসলামাবাদের জনসভায় নিজেই বক্তব্য দেন ইমরান। এই অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন।