স্টাফ রিপোর্ট:: সিলেটে সম্প্রতি ঘন ঘন ঘটছে ছোট-বড় অগ্নিকান্ড। গত তিন মাসে সিলেট নগরীতে মোট ৯টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে এক ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। শপিং মল থেকে শুরু করে অবাসিক ভবনে একের পর এক অগ্নিকান্ডে নগরবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
চলতি বছরের শুরুতে আগুন আতঙ্ক চেপে বসেছিল সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায়। গত ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে কাকলী শপিং সেন্টারে অগ্নিকান্ড ঘটে। প্রায় চল্লিশ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ১১ তলা বিশিষ্ট শপিং সেন্টারটিতে রাত দেড়টার দিকে মার্কেটের ৪র্থ তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক ক্যাবলের মাধ্যমে আগুন উপরের তলাগুলোয়ও ছড়িয়ে যেতে লাগে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে রাত পৌনে ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। প্রায় একঘন্টা চেষ্টর পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন সার্ভিসের কর্মীরা। এতে কারো প্রাণহানী না হলেও, ক্ষতি হয় কয়েক লক্ষ টাকার।
এর পর গত ৯ ফেব্রুয়ারী সিলেট নগরের জিন্দাবাজার মোড়ে একটি বন্ধ দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে জিন্দাবাজার মোড়ের ব্লু-মুন নামের একটি কাপড়ের শোরুমে এ ঘটনা ঘটে। রাতে হঠাৎ করে এমন অগ্নিকান্ডে প্রতিবেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরে খবর পেয়ে রাত পৌনে ১১টার দিকে সিলেট ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। একই মাসের ২৮ তারিখে নগরের দক্ষিণ সুরমায় বাবনা পয়েন্টে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। রাত সোয়া ১০টার দিকে এ অগুন লাগে। খবর পেয়ে সিলেট দমকল বাহিনীর ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে রাত ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। যে দোকানে আগুন লেগেছে তার পাশেই গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার নিয়ে একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরেই রয়েছে যমুনা ও পদ্মা জ্বালানি তেলের কোম্পানির ডিপো।
পরের মাস মার্চে ২টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ৫ মার্চ নগরীর আখালিয়া গুয়াবাড়ি এলাকায় অগ্নিকান্ডে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কলোনির ৮টি ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে আগুন লাগে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কলোনির ৮টি ঘরে। এসময় কলোনির বাসিন্দারা দ্রুত বের হয়ে এলেও অসুস্থ ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা শোভা রানী চন্দ্র বের হতে পারেননি। তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর পরের দিন (৬ মার্চ) নগরীর জেল রোড এলাকার বহুতল বিপণিবিতান আনন্দ টাওয়ারের পেছনের ফার্নিচারের দোকানে আগুন লেগেছে। রাত ৯টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণের আনেন। এসময় আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এতে কোন প্রাণহানী না ঘটলেও আশে পাশের বস্তির ৬/৭টি ঘর পুড়ে যায়।
চলতি (এপ্রিল) মাসের ৫, ৬ ও ৭ তারিখে নগরীর তিনটি অগ্নিকান্ড ঘটে। ৫ এপ্রিল নগরীর পূর্ব দরগাহ গেইটে ‘বেবি গার্ডেন’ নামের শিশুপণ্যের একটি দোকানে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভোর ৫টার দিকে আগুনের সুত্রপাত ঘটে। আগুনে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিক।
পরদিন ৬ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় দৌলতপুর স্কয়ার নামের একটি ৫ তলা ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি তবে ভবনের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
এরপরদিনই (৭ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২ দিকে আবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এবার নগরীর হাউজিং এস্টেটস্থ আর্কেডিয়া শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে একটি গাড়িতে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। তৎক্ষণাৎ স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম দ্রুত গিয়ে গাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এ আগুনে আর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ঘন ঘন অগ্নিকান্ডে সিলেট নগরবাসীর মধ্যে আগুন আতঙ্ক বিরাজ করছে। বড় ধরণের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। কবে কখন অগ্নিকান্ড ঘটে সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে নগরবাসীর মধ্যে।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তালতলা স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, সিলেটের আবহাওয়ার এখন অনেকটাই শুষ্ক। তাই যেকোন জায়গায় আগুন লাগলে তা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ড কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও, সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানান তিনি। তা না হলে সিলেটবাসীকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।