দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ এখন শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিমে ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওডিশা উপকূলের দিকে এগিয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আঘাত করতে পারে। তারপর সামান্য বাঁক নিয়ে এটি উত্তর দিকে ওডিশার দিকে যেতে পারে। তবে কোন পথে স্থলভাগে প্রবেশ করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
দপ্তর আরও বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ গতি বাড়িয়ে ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আন্দামানের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার থেকে ৫০০ কিলোমিটার পশ্চিমে, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপট্টনম থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পুরী থেকে ৮৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১০ মে থেকে দক্ষিণ বঙ্গে বৃষ্টি শুরু হবে। ১০ থেকে ১২ মে পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে হালকা বৃষ্টি হলেও ১১ তারিখ থেকে ১২ মে পর্যন্ত দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারেও বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এসব এলাকার প্রশাসনকে ‘অশনি’ মোকাবিলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে মাইকে প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্যজীবীদের আগামী কয়েকদিন বিশেষ করে ১০ থেকে ১২ মে সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে, ‘অশনি’র প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আজ সোমবার বৃষ্টি বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে সাগর।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে গভীর সাগরে বিচরণ করতে মানা করা হয়েছে।