বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:: একটি জাল দলিলকে কেন্দ্র করে দু’টি পরিবারের ১ কোটি ৭০লাখ টাকা জলে গেছে। জালিয়াত চক্রের কবলে পড়ে দুটি পরিবারই এখন প্রায় নি:স্ব। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পালের চক গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মৃত হাজি ইরশাদ আলীর ছেলে জমির আলী ও তার চাচাত ভাই ছইল মিয়ার মধ্যে।
কাগজপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে হাজি ইরশাদ আলীর ভাতিজা মৃত ইছহাক আলীর পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসি ছইল মিয়া স্বাক্ষরিত একটি নামজারিতে বুবরাজান মৌজার জেএল নং ৬৩ এর ১৯৭ খতিয়ানের ৯৯৭ দাগে ২২ শতক ভূমি এবং ১০০০নং দাগে ৪শতকসহ মোট ২৬ শতক ভূমি নামজারির আবেদন করেন। নামজারির সাথে তিনি ১৯৯৫ সালের ৮আগস্টে ছইল মিয়ার চাচা ইরশাদ আলীর দলিল দাখিল করেন এবং ৮৪৩/২০১১ইং তারিখে নামজারি মামলামুলে তা নামজারি ও করা হয়। নামজারির আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট তফসীলদার সরেজমিন তদন্ত ও খতিয়ানভুক্ত পক্ষদ্বয়কে নোটিশ দিয়ে জানানো এবং সার্ভেয়ার দ্বারাও তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে হয় ও ক্রেতা বিক্রেতার উপস্থিতিতে শুনানী ক্রমে নামজারি করা হয়। কিন্তু এ ঘটনায় সবকিছু গোপন রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বড় অংকের টাকা নিয়ে নামজারি করা হয়েছে। কিন্তু এই নামজারিতে খতিয়ানভুক্ত নেফুর আলী ও জমির আলী কোন নোটিশ পাননি। তখনকার সময়ে ভুমি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান। এই নামজারির খবর শুনে নেফুর আলী ২৫১/৯৫নম্বরটি ঠিক রেখে দলিলের দাতা গ্রহীতা মৌজা ও দাগ খতিয়ান পরিবর্তন করে ৮/৮/১৯৯৫ইং তারিখে উপরোক্ত দলিলটি ইরশাদ আলী বিক্রি করেছেন বলে দলিলটি সৃষ্টি করা হয়। জমির আলী এই জাল দলিলের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ (জিআর ১৩৯/১৯ইং), মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে সিলেটের সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ১০/০৯/২০ইং তারিখে মামলাটি ফাইনাল রিপোর্ট দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে বাদি জমির আলী নারাজি দাখিল করলে পুণরায় সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক রোকিয়া খানম মামলাটি ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে বাদি জমির আলীর বিরুদ্ধে ২১১ধারা প্রাথমিক প্রসিকিউশন দেন। এই প্রসিকিউশনে বাদি জমির আলী ১৫দিন জেল খাটেন। জমির আলী চাচাত ভাই নেফুর আলী একই ঘটনায় ২৫১০/৯৫ নং জাল দলিলের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ জিআর ১৪৪/১৯ইং দায়ের করলে সিআইডি পুলিশ আব্দুর রাজ্জাক ২৯/০৭/২০২০ইং তারিখে চার্জশীট দাখিল করেন। একই ঘটনায় ছইল মিয়ার বোন ফুলতেরা বেগম তার চাচাত ভাই জমির আলী, নেফুর আলীসহ ৬জনকে আসামি করে একই জাল দলিল নং (২৫১০/৯৫) এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। (বিশ্বনাথ জিআর ১৫৭/১৯ইং)। এই মামলাটি সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক রোকিয়া খানম ৬জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। এই জাল দলিলের সৃষ্ট বিরোধ নিয়ে নেপুর আলী আরো ৯জনের বিরুদ্ধে (বিশ্বনাথ জিআর মামলা নং ৩৭/২০১৭) দায়ের করলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
অবশেষে জমির আলী ৮৪৩/২০১১ইং নামজারি মামলার বিরুদ্ধে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি সত্যজিত রায় দাসের নিকট নামজারি ৬৯/১৯দায়ের করে সহকারি কমিশনার ভূমির নামজারির আবেদনটি বাতিলের আবেদন করেন। পরবর্তিতে ছইল মিয়ার বোন ফুলতেরা বেগম এই মামলায় হাজির হয়ে ৯১/১৯ নামজারি আপিল মামলাটি দায়ের করে ৮৪৩/২০১১ নামজারির আদেশটি বাতিলের আবেদন করেন। শুনানী শেষে সত্যজিত রায় দাস সহকারি কমিশনার ভূমির নামজারি আদেশটি বাতিল করেন। প্রায় ১০ বছরে ১টি জাল দলিলের বিরুদ্ধে দেওয়ানী ফৌজদারিসহ ১০/১২টি মামলা দায়ের করায় উভয় পক্ষের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু দলিল জালিয়াত চক্র ও নামজারির সাথে যারা জড়িত তারা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা দেশে অহরহ ঘটছে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ে দতন্ত হওয়া জরুরী বলে মনে করছেন সুশিল সমাজ।