কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:: চারপাশে ছড়িয়ে আছে সাদা পাথর। মনে হয় যেন, প্রকৃতি শুভ্র বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি। চারদিকে ঘিরে আছে ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়। তার উপরে যেন আছড়ে পড়েছে মেঘ। এ ছাড়াও চারপাশে আছে সবুজ প্রকৃত। সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য। দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই অপূর্ব স্থানটি উপভোগের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আনন্দ ভ্রমণ করতে আসেন এখানে।
সম্প্রতি সময়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে সাদা পাথর তলিয়ে যাওয়ায় পর্যটক কম থাকার সুবাধে রাতের আঁধারে মামা-ভাগ্নার নেতৃত্বে
চুরি হচ্ছে সাদা পাথর। এতে করে সৌন্দর্য হারাচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার সেচ্ছাসেবক লীগ পরিচয়ধারী চাঁদাবাজ ও পুলিশের লাইন ম্যান হিসাবে পরিচিত শাহাব উদ্দিন ও তার ভাগনা বালু-পাথর চুরির একাধিক মামলার আসামী রাসেল মিয়া নেতৃত্বে চুরি হচ্ছে দেশের প্রকৃতিকন্যা খ্যাত ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটন স্পটের সাদা পাথর।
এদিকে, পর্যটনের পাথর চুরির খবরে চুরিকৃত পাথর বোঝাই একটি ট্রাক্টরসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবারে পাথর চুরির ঘটনায় এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭ জনের নামে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উপজেলার ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রামের আব্দুল শহীদের ছেলে মোহাম্মদ আলী(২১), দক্ষিণ রাজনগর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল আলিম (৩২), রাজনগর নতুন বস্তির বাছির মিয়ার ছেলে রুহুল (৩১), দক্ষিণ রাজনগর গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া (৩৪), কলাবাড়ী গ্রামের আদু মোল্লার ছেলে কামরুল (২৭), কালিবাড়ী গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া (২৬) ও রাজনগর গ্রামের আইনুল মিয়া (৩২) কে আসামী করে মামলা করা হয়। এই মামলায় চাঁদাবাজ শাহাব উদ্দিনের ভাগনা রাসেলের নাম থাকলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে শাহাব উদ্দিন হয়নি মামালার আসামী।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শাহাব উদ্দিনের নির্দেশনায় রাসেলের হাতে এসব অপকর্ম হলেও পুলিশ বরাবরই শাহাব উদ্দিনকে বাঁচিয়ে মামলা দায়ের করেন।
জানা যায় মঙ্গলবার ভোর রাতে বিজিবি ও পুলিশের লাইন ম্যান মামা-ভাগনাকে চাঁদা দিয়ে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের পূর্ব পাড় থেকে পাথর চুরি করে উপজেলার কালাইরাগ ও কলাবাড়ীর এলাকায় ক্রাশার মিলে বিক্রয় করা হয়। এছাড়াও পর্যটন কেন্দ্রের পাথর চুরির সাথে পুলিশের অসাধু এক কর্মকর্তা ও বিজিবি সদস্যের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় দায়িত্বরত কতিপয় বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতায় চুরি হয় সাদা পাথর।
সরজমিনে কলাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ক্রাশার মিলে গিয়ে দেখা মেলেছে, পাথরবাহী একাধিক ট্রাক্টর দিয়ে রাখা চুরিকৃত সাদাপাথর।
সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার একজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বাসিন্দা জানান, প্রায়ই রাতের আঁধারে সাদাপাথর চুরি করছে প্রভাবশালী একটি মহল। নিয়মিত যদি পাথর চুরি তাহলে কয়েক মাসের মধ্যেই পর্যটন কেন্দ্রের সকল পাথর শেষ হয়ে যাবে। এতে করে ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে আসার আগ্রহ হারাবে।
স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী বলেন, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি নতুন হওয়ার সুবাদে ওসির অগোচরেই কিছু অসাধু কর্মকর্তা পাথর চুরিতে অপরাধীদের সহযোগিতা করছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, পাথর চুরি ঘটনায় মামলা হয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি অপরাধীদের সহযোগিতা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও রক্ষা করা প্রশাসনের কাজ। পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।